শিরোনাম :
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সাঈদ সভাপতি বারী সম্পাদক সুন্দরবনে এক জেলে অপহরণ,বনজীবিদের মধ্যে আতঙ্ক শ্যামনগরে ডিজিএফআই কর্তৃক এক ভূয়া গোয়েন্দা সদস্য আটক সুন্দরবনে বাঘের সাথে লড়াই করে ঘরে ফিরলেন রেজাউল পাইক সাংবাদিক ঢাকায়,মামলা হলো শ্যামনগর থানায় ইসু ভারতে ইলিশ মাছ পাঁচারের শ্যামনগরে ১০ বছর পর উন্মুক্ত হল দুটি খাল শ্যামনগরে মৎস্য ঘের মালিককে কুপিয়ে হত্যা একটি নিখোঁজ সংবাদ, খাগড়াদানা গ্রামের গোলাম রসুল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ শ্যামনগরে সড়ক দূঘটনায় ও পানিতে ডুবে নিহত দুই, আহত এক একটি নিখোঁজ সংবাদ, ছোটভেটখালি গ্রামের হালিমা নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে শ্যামনগরে ৮০০ পরিবারের মাঝে রেড ক্রিসেন্টের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শ্যামনগরে ভারতীয় মদ সহ দুই কারবারি আটক শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ২৩০ পরিবারের মাঝে বাংলালিংক পরিবারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরন শ্যামনগরে রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আ.লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সুন্দরবনে রেমালের তান্ডবে নিখোঁজ তিন জেলে উদ্ধার

সুন্দরবন রক্ষা দায়িত্ব আমাদের সুন্দরবনের সষ্কট, শষ্কা, খুলনা সাতক্ষীরা উপকূলবাসীর

রাকিবুল হাসান / ১৪৩ ভিউ :
সময় : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

রাকিবুল হাসান মুন্সীগঞ্জ শ্যামনগর প্রতিনিধিঃ
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকুলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্থ বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীএয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি। বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের অংশে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসাবে সুন্দর বন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার ৭৫টি কম্পার্টমেন্ট জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দর বনের ৬৫১৭ বর্গ কিলোমিটার ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট (৬৬%) বাংলাদেশে,বাকি ৩৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার ২০টি কম্পার্টমেন্ট (৩৪%) ভারতে মধ্যে।আপনি জেনে অবাক হবেন যে ছোট বড় ৫৮টি দ্বীপ বনভূমিতে আচ্ছাদিত।দেশের মোট বনভূমির প্রায় ৪৫ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত এই উপকূলীয় সুন্দরবন। এখানেই বসবাস করে সুন্দরী,পশুর,কেওড়া, বাইন,গেওয়া, গরান, হেতাল, গোলপাতা, হারগোজাসহ ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ,৪০০ উর্দ্ধে প্রজাতির মাছ,২৭০প্রজাতির পাখি,৫০প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪০প্রজাতির সরীসৃপ ও১০প্রজাতির উভচর প্রানী যার বুকে অবাধে বিচরণ করে হরিণ,শুকর,বানর, অজগরসহ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও ভয়ঙ্করতম প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যাকে সুন্দরবনের শাসনকর্তা বললেও কম বলা হয়।যার শৃঙ্খলাবোধ,মিতব্যয়িতা,ন্যায়বিচারিক শাসনে পরিপুষ্ট হয় হাজারো রকমের জীবজন্তু ও পাখি। যার শাসনে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেয়ে আসছে সাতক্ষিরা,খুলনা ও বাগেরহাটের রক্ষাকবচ খ্যাত প্রাকৃতিক শেল্টার বেল্ট এই সুন্দরবন।
অথচ সেই সুন্দরবনের প্রতিই মানুষের শ্যেন দৃষ্টি পড়ে সপ্তদশ শতাব্দীতে।সমুদ্রপথে প্রথম অনুপ্রবেশ ঘটায় ফরাসিরা।তারপর ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ঘাঁটি গাড়ে জ্যেব চার্নক। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কালেক্টর জেনারেল ক্লড রাসেল এই সুন্দরবনকে ইজারা দেওয়া শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায়১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে হেঙ্কেলের সুপারিশ মেনে এই নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর সুন্দবনকে চাষাবাদ যোগ্য ১৪৪ টি তালুকে ভাগ করা হয়।কর্ম সংস্থানের আশায় চতুর্দিক থেকে ছুটে এসে জড়ো হয় নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষ।ক্রমেই সংকুচিত হতে শুরু করে সুন্দরবন।
কিন্তু আমাদের এই উপকূলীয় সুন্দরবন যেন শক্তিশালী রোম সাম্রাজ্যের পাশের ছোট্ট পার্বত্য শহর নুমান্থিয়া ( Numantia)। তার শাসনকর্তা বেঙ্গল টাইগার,যে তার অধিবাসীদের স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।যার দুর্দমনীয় প্রতিরোধের কারণে বুদ্ধি ওকৌশলে শ্রেষ্ঠ মানুষওতাদের অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বাধ্য হয়।ফলে যত সহজে সমতলের বনভূমি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল মানুষএখানে তার ছেদ পড়ে। নুমান্থিয়দের মতো দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভয়ঙ্কর বেঙ্গল টাইগার তার সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়।
কিন্তু বর্তমান কালের বুদ্ধিমান মানুষ যেন রোমান জেনারেল “স্কিপিও এমিলিয়ানাস “। তাদের রয়েছে ভিন্ন কৌশল।তারা চায় না বেঙ্গল টাইগারের সাথে সম্মুখ সমর। কারণ এতে যে লোক ক্ষয় হবে। তাই তারা সুন্দরবনকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য ‘ স্কিপিও এমিলিয়ানসের ‘অনুকরণে কৌশল নির্ধারণ করেছে । তারা উজানে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ, কাঁকড়া চাষ শুরু করেছে । একাধারে লবণসহ বিভিন্ন শিল্প ও কৃষি উৎস থেকে জলে ও স্থলে দূষণ ছড়িয়ে দিয়ে জল, স্থল ও বায়ুকে দুষিত করে তুলতে শুরু করেছে। তাদের ব্যবহৃত বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে ছড়িয়ে দিচ্ছে তেল যা জলজ জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । পাশাপাশি ইকো ট্যুরিজমের নামে শব্দদূষণ ও পানিদূষণে মেতে ওঠেছে তারা।পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে জলজ বাস্তুতন্ত্রের সাড়ে সর্বনাশ করতে শুরু করেছে । একই সাথে চোরা শিকারিদের ইন্ধন জুগিয়ে সুন্দরবনের শাসক বেঙ্গল টাইগার ও দৃষ্টিনন্দন হরিণ ও বন্যপ্রাণী শিকার করে স্থলজ জীবসম্প্রদায়কেও ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে ।
ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়। উজানের মিঠাপানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে চলেছে। এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ প্রেমিক নুমান্থিয়দের মতো সুন্দরবনের বাসিন্দাদেরও খাদ্য ও পানীয়জলের অভাবে বিনা সমরে মৃত্যবরণ করা অবধারিত হয়ে পড়বে।
আমরা চাই না দেশ প্রেমিক নুমান্থিয়দের মতো সুন্দরবন ও তার বাসিন্দরা নৃতাত্ত্বিক অবরোধে মৃত্যুর মুখে পতিত হোক। আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাসের পাতায় সুন্দরবনের অবদানের ও প্রয়োজনীয়তার কথা জেনে তাদের পূর্বপুরুষদের অভিসম্পাৎ করুক।
এখনও সময় আছে,
আসুন, আমরা সম্মিলিত চেষ্টায় সুন্দরবনকে রক্ষা করি। আসুন যুগোপযুগী গবেষণা, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে সাতক্ষীরা,খুলনা ও বাগেরহাটের রক্ষা কবচ খ্যাত প্রাকৃতিক শেল্টারবেল্ট এই সুন্দরবনকে রক্ষা করি।